![]() |
আরিনা সাবালেঙ্কা ছবি-সংগৃহিত |
আরিনা সাবালেঙ্কা একজন পেশাদার টেনিস খেলোয়াড়।
যারা টেনিস নিয়ে কমবেশি খবর রাখেন তারা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছেন আরিনা সাবালেঙ্কা
বর্তমান সময়ের নারী টেনিসের অন্যতম প্রভাবশালী মুখ। বর্তমানে মহিলা টেনিস
এসোসিয়েশন কর্তৃক নির্ধারিত নারী একক র্যাঙ্কিংয়ে ১ নম্বরে অবস্থান করছেন আরিনা
সাবালেঙ্কা। যদিও এই র্যাংকিং প্লেয়ারের পারফরমেন্সের সাথে মিল রেখে উঠানামা করে।
সময় গেছে আর তার টেনিস ক্যারিয়ার উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে। টেনিস দুনিয়ায় তার
ডাকনাম ‘দ্যা টাইগার’ তার জন্মস্থান বেলারুশের রাজধানী মিনস্ক। তিনি হঠাৎ করেই
টেনিসের দিকে ঝুকে পড়েন। তার বাবা ছিলেন একজন আইস হকি খেলোয়াড়। তিনি ছোটবেলায়
বাবার সাথে প্রায়ই ঘুরতে বের হতেন। তিনি যখন গাড়ী চালানো শিখতে বাবার সাথে বের
হতেন একদিন তার বাবা তাকে একটি টেনস কোর্টে নিয়ে যান। সাবালেঙ্কা টেনিস কোর্ট দেখে
মুগ্ধ হন এবং সেখান থেকেই টেনিসের স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করেন বলা যায় তার টেনিস
খেলোয়াড় হওয়ার যাত্রা সেদিন থেকেই শুরু হয়। বাবাও তাকে উতসাহ দেন। ২০১৯ সালে তার
বাবা হঠাৎ করেই মারা যান। সাবালেঙ্কা ভর্তি হন ন্যাশনাল টেনিস একাডেমিতে যেটি তার
নিজ শহর মিনস্কে অবস্থিত। এটি ২০১৪ সালের ঘটনা। ২০১৯ সালে তার তার পরের বছর
সাবালেঙ্কা বেলারুশের জাতীয় টেনিস ফেডারেশনের সহায়তায় পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে
যাত্রা শুরু করেন।
২০১৭ সাল পর্যন্ত কিছু খেলায় অংশগ্রহন করেন।
তারপর তিনি ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন খেলতে যান। তিনি সেই মেজর টুর্নামেন্টের
কোয়ার্টার ফাইনালে এ্যাশ্লে বার্তির কাছে পরাজিত হন।
সাবালেঙ্কা কোন বড় টুর্নামেন্টে বড় প্রথম জয়
পায় ইন্ডিয়ান অয়েলস ওপেনে তার প্রতিপক্ষ ছিলো সেভেথলোনা কুযনেস্তোবা। তার ক্লে
কোর্টের যাত্রা শুরু হয় লেডিস ওপেন লুগানো টুর্নামেন্টে। যে টুর্নামেন্টের ফাইনালে
উঠেছিলেন তিনি। সেই ফাইনাল ম্যাচে তিনি বেলজিয়ামের এলিস মার্টিনের কাছে পরাজিত হয়ে
রানার্সাআপের শিরোপা জয় করেন। এই সাফল্য তাকে বিশ্ব টেনিসে নারী এককে প্রথম বারের
মত সেরা ৫০ এর মধ্যে আসতে সহায়তা করে।
২০১৮ সালের ইউএস ওপেনের ৩য় রাউন্ডে
রায়ঙ্কিংয়ের ৫ নাম্বারে থাকা চেক প্রজাতন্ত্রের পেত্রা কেভিতোভাকে পরাজিত করে সাড়া
ফেলে দেন। যদিও ঐ টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন নাওমি ওসাকার কাছে পরের রাউন্ডে পরাজিত
হন। ২১০৮ সালে ডব্লিউটিএ কর্তৃক সেরা উদীয়মান টেনিস প্লেয়ারের স্বীকৃতি পান।
২০১৯ সালে শেনযেন ওপেন জয় দিয়ে তার মৌসুম শুরু
করনে। কিন্তু এই মৌসুমে তার সাফল্য ধরে রাখতে পারেননি। তাকে সেই বছর অস্ট্রেলিয়া
ওপেনের জন্য ফেভারিট ধরা হলেও ১৭ বছর বয়সী আমেরিকান টেনিস তারকা আমান্দা আনিসিমভার
কাছে পরিজিত হন। ফ্রেন্স ওপেনের ক্ষেত্রেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে তিনি
দ্বিতীয় রাউন্ডে আবারো আমান্দা আনিসিমভার কাছে পরাজিত হন। 2019 সালে সাবালেঙ্কা এককভাবে খুব একটা ভালো করতে না পারলেও ডাবলসে বা যৌথভাবে ভালো
সাফল্য বয়ে এনেছিলেন। তিনি জুটি বাধেন এলিস মার্টিনের সাথে। তারা
ঐ মৌসুমে ফ্রেন্স ওপেনের সেমিফাইনালে উঠেছিলেন। উম্বলডনের কোয়ার্টার ফাইনাল
খেলেছিলেন এই জুটি। এই জুটি আরো সফলতা পেয়েছিলো তার কিছুদিন পর ইউএস ওপেনে। ওই
টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছিলো সাবালেঙ্কা এবং মার্টিন জুটি। যদিও তারা শিরোপা
জিততে পারেনি কিন্তু তারা টেনিস ভক্তদের নজর ও ভালোবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলো।
২০২০ সালে সাবালেঙ্কা খুব বেশী সফলতা টেনিস কোর্টে দেখা পাননি তবে বছরের
শেষ দিকে ভিক্টরিয়া আজারেঙ্কাকে পরাজিত করে টপ টেনে জায়গা করে নেন।
২০২১ সালের শুরুতেই সাবালেঙ্কা আবুধাবি ওপেনএ অংশগ্রহন করেন। সেখানে
ফাইনালে রাশিয়ান টেনিস তারকা ভেরনিকা কুদেরমেটোভাকে পরাজিত করে আবুধাবি ওপেন
শিরোপা জয় লাভ করেন। সাথে সাথে র্যাংকিংয়ে ৭ নম্বরে উঠে আসেন।
এর পরেই তিনি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন খেলায় অবতীর্ন হন। কোয়ার্টার ফাইনালে তার
প্রতিপক্ষ ছিলো সেরেনা উইলিয়ামস। সাবালেঙ্কা সেরেনার কাছে পরাজিত হন কোয়ার্টার
ফাইনালে। সাবালেঙ্কা নারী এককে হারলেও ডাবলসে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
তার পার্টনার ছিলেন এলিস মার্টিন। এই শিরোপা জয়ের মাধ্যমে সাবালেঙ্কা ক্যারিয়ারে
প্রথম বারের মত টেনিসের দ্বৈত র্যাংকিংয়ে ১ নম্বরে জায়গা করে নেন। ২০২১ সালে
মাদ্রিদ ওপেনের একক খেলায় ফাইনালে এ্যাশ্লে বার্তির মুখোমুখি হন। সেই খেলায় জয়লাভ
করে মাদ্রিদ ওপেনের শিরোপা জয় লাভ করেন। একই সাথে তিনি একক র্যাংকিংয়ে ৪ নম্বরে
আরোহন করেন সাবালেঙ্কা। সেই বছর উম্বলডনে সাবালেঙ্কা সেমিয়াফাইনালে খেলার গৌরব
অর্জন করে। সেমিফাইনালে হারলেও তিনি র্যাংকিংয়ে ৩ নম্বরে ঊঠে আসেন।
২০২২ সালট শুরু করেন ২ নং বাছাই
হিসেবে। 2022 সাল সাবালেঙ্কার কাছে মনে হয়েছে তার সকল শিরোপার
পথে বাধা পোলান্ডের টেনিস তারকা এবং ১ নম্বর বাছাই ইগা শোয়াটেক। কাতার লেডিস ওপেনে সাবালেঙ্কা দারুন ফর্মসহ সেমিফাইনালে ঊঠেন।
কিন্তু শোয়াটেকের কাছে পরাজিত হন। স্টার্টগার্ট ওপেনে আবারো তিনি অসাধারন
পারফরমেন্স দেখিয়ে ফাইনালে পৌছান। ঠিক ফাইনালে তার প্রতিপক্ষ আর কেঊ নয় ইগা
শোয়াটেক। ফলাফল সাবালেঙ্কা ফাইনালে হেরে রানার্সআপের শিরোপা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে
হয়। একই বছর সাবালেঙ্কা ইটালিয়ান ওপেনের সেমিফাইনাল খেলার গৌরব অর্জন করেন
সেমিফাইনালে তার প্রতিপক্ষ সেই ইগা শোয়াটেক। ২০২২ সালে তৃতীয় বারের মত শোয়াটেকের
কাছে পরাজিত হয়।
এখানেই শেষ নয় ২০২২ সালের ইউএস ওপেনে আবারো সেমিফাইনালে মুখোমুখি
সাবালেঙ্কা ও ইগা শোয়াটেক। বছরের অন্য ম্যাচের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে এক মৌসুমে ৪র্থ
বারের মত শোয়াটেকের কাছে হেরে সেমিফাইনাল
থেকে বিদায় নেন সাবালেঙ্কা।
২০২৩ সালটি আরিয়ানা সাবালেঙ্কার জন্য সৌভাগ্যের বছর। ২০২২ সালে শিরোপার
কাছাকাছি থেকে বারবার ফিরে আসাটা ২0২৩ সালে এসে সৃষ্টিকর্তা খোলা হাতে দুহাত ভরে
দিয়েছেন। তিনি আডিলেড ১ খেলতে যান দ্বিতীয় বাছাই হিসেবে এবং ফাইনালে চেক
প্রজাতন্ত্রের লিন্ডা নস্কোভাকে পরাজিত করে ক্যারিয়ারের ১১ তম শিরোপা জয় করেন। কিছুদিন পর সাবালেঙ্কা অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে খেলতে যান ৫ম বাছাই হিসেবে। দুর্দান্তভাবে একের পর এক জয়ের পর পৌছে যান তার স্বপ্নের ফাইনালে।
এটিই ছিলো তার ক্যারিয়ারের একক ম্যাচের মেজর টুর্নামেন্টের ফাইনাল। ফাইনালে তিনি
মুখোমুখি হন রাশিয়ান বংশোদ্ভূত কাজাকিস্থানের টেনিস প্লেয়ার এলিনা রাইবাকিনা যিনি সর্বশেষ উইম্বলডন
চ্যাম্পিয়ন। সাবালেঙ্কা রাইবাকিনাকে পরাজিত করে ক্যারিয়ারে প্রথম একক কোন মেজর
টুর্নামেন্টে শিরোপা জয় লাভ করেন। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতার পর সাবালেঙ্কা র্যাংকিংয়ে
আবার ২ নম্বরে উঠে আসেন।
তিনি ইন্ডিয়ান ওয়েলসের ফাইনালে আবার রাইবাকিনার মুখোমুখি হন কিন্তু এবার
তিনি পরাজিত হন এবং রানার্সাপ শিরোপা জয় করেন।
২০২৩ সালেই মাদ্রিদ ওপেনে সাবালেঙ্কা ফাইনালে মুখোমুখি হন ১নং বাছাই ইগা
শোয়াটেকের। কিন্তু এবার তিনি শোয়াটেকের বিপক্ষে জয় লাভ করেন এবং এক বছরেই ৩য়
শীরোপা জয়ের স্বাদ পান। পরবর্তীতে ফ্রেন্স ওপেনে তিনি সেমিফাইনালে পরাজিত হন।
একই মৌসুমে ইউএস ওপেনে দুর্দান্তভাবে খেলে ফাইনালে অবতীর্ন হন। তিনি এবার
মুখোমুখি হন কোকো গফের। কিন্তু ফাইনালে হেরে রানার্স আপ শিরোপা নিয়ে সন্তুষ্ট
থাকতে হয়। ইউএস ওপেনের ৪র্থ রাউণ্ডে ১নং খেলোয়াড় পরাজিত হওয়ায় সাবালেঙ্কা তার
ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত ডব্লিউটিএ র্যাংকিং ১ নম্বরে আরোহন করতে সক্ষম হন।
2024 সালে সাবালেঙ্কা
অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে অসাধারন ফারফরমেন্স দেখান। সেখানে তিনি কোন সেট না হেরে
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ২০১৩ সালের পর তিনিই একামাত্র নারী টেনিস
প্লেয়ার যিনি অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা ধরে রাখতে সক্ষম হন। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে
ইউএস ওপেনের শিরোপা জয় করেন। ফাইনালে তিনি পরাজিত করেন আমেরিকান টেনিস প্লেয়ার জেসিকা
পেগুলাকে।
উইহান ওপেনে সাবালেঙ্কা এ বছর চ্যাম্পিয়ন হন। তিনি জেং কিনওয়েন কে ফাইনালে হারিয়ে শিরোপা জয় করেন। এই জয়ের সাথে সাথে
অক্টোবর মাসে তিনি নারী টেনিস র্যাংকিংয়ে আবার ১ নম্বরে উঠে আসেন।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ডব্লিঊটিএ কর্তৃক প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন।
২০২৫ সালের শুরুতেই চ্যাম্পিয়ন শিরোপা উচিয়ে ধরার সুযোগ পান। ব্রিসবেন
ইন্টারন্যাশনালের ফাইনালে মেক্সিকান টেনিস প্লেয়ার রেনাটা যারাযুয়াকে পরাজিত করে । এই বছর
অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে তিনি ভালো শুরু করেন। ফাইনালে এসে তিনি মুখোমুখি হন মেডিসন
কিসের। ফাইনালে তিনি মেডিসন কিসের কাছে পরাজিত হন।
মিয়ামী ওপেনে সাবালেঙ্কা জেসিকা পেগুলাকে পরাজিত করে প্রথমবারের মত মিয়ামী
ওপেন শিরোপা জয় লাভ করেন।
২০২৫ সালে আরো একটি শীরোপা জয় লাভ করেছেন। সেটি হলো মাদ্রিদ ওপেন। ফাইনালে
তিনি কোকো গফকে পরাজিত করে।
আরিনা সাবালেঙ্কার শক্তিশালী দিক হলো তিনি আক্রমনাত্মক একজন প্লেয়ার। তার সার্ভ খুব শক্তিশালী বলে বিবেচনা করা হয়। তিনি
মাঝে মাঝে সার্ভ করেন ঘন্টায় প্রায় ২০০ কিমি গতিতে।
সাবালেঙ্কা এখন পর্যন্ত ২০ টি একক শিরোপা এবং ডাবলসে ৬ টি শিরোপা জয় করেছেন।
তার বয়স বিবেচনায় এখনো ক্যারিয়ারে লম্বা সময় খেলার সুযোগ রয়েছে। হয়তো ট্রফির সংখ্যা
আরো বাড়বে এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
0 মন্তব্যসমূহ