![]() |
মোহাম্মদ সালাহ ছবি-সিএনএন |
মোহাম্মদ সালাহ একজন
মিশরীয় পেশাদার ফুটবলার। বর্তমান ফুটবল দুনিয়ায় যে কয়েকজন
ফুটবলারকে বিগ স্টার হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যারা ফুটবল ভক্তদের মাতিয়ে রেখেছেন
তাদের মধ্যে মোহাম্মদ সালাহ অন্যতম। মোহাম্মদ সালাহ মিশরের জাতীয় দলের অধিনায়ক।
ক্লাব ফুটবলে বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম
জনপ্রিয় ইউরপীয়ান ক্লাব লিভারপুলের প্রান ভোমরা সালাহ। তিনি লিভারপুল দলের রাইট
উইংগার হিসেবে খেলেন যদিও আক্রমন ভাগের মূল দায়িত্ব তাকেই সামলাতে হয়। তিনি
আফ্রিকান ফুটবলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় তো বটেই, বিশ্বের অন্যতম সেরা উইংগার হিসেবে
তাকে বিবেচনা করা হয়। তার খেলার অন্যতম ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য ক্লিনিকাল ফিনিশ,
দুর্দান্ত গতি, ড্রিব্লিং এবং অসাধারণ প্লেমেকিং।
সালাহর যখন বয়স ১৪ তখন তিনি আল মুকাওয়ালিন ক্লাবে ভর্তি হন। যদিও ট্রেইনিংয়ের
জন্য তার স্কুলের ক্লাস মিস করতে হয়েছে। ম্যানেজার রেজোয়ানের চোখে পড়েন সালাহ।
সালাহকে বিশেষ খাবার নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে তার পেশি গঠনের কাজ চালিয়ে যান। সালাহ তার প্রথম ম্যাচ খেলতে নামেন ২০১০ সালে মিশরীয় প্রিমিয়ার লীগে। সালাহ
প্রথম দিকের কিছু ম্যাচ খেলে যাচ্ছিলেন কিন্তু গোলের দেখা পাচ্ছিলেন না । গোল না পেয়ে
একদিন তিনি কেঁদে ফেলেছিলেন। কিছুদিন পর আল আহলির বিপক্ষে প্রথম
গোলের দেখা পান।
সুইচ সুপার লিগ ক্লাব বাসেল সালাহকে দীর্ঘদিন ধরে সালাহর উপর চোখ রেখেছিলো।
তাই তারা মিশরীয় জাতীয় অনুর্দ্ধ-২৩ দলের সাথে একটি প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করে। সেই
খেলায় দ্বিতীয়আর্ধে মাঠে নামার সুযোগ পাই। সালাহ সেকেন্ড হাফে নামলেও সেদিন জোড়া
গোল করে মিশর ৪-৩ গোলে জয় লাভ করে। বলা যায় সেদিনের পর থেকে বাসেল সালাহকে তাদের
ক্লাবে সাইন করায় । শুরু হয় সালাহ্র ক্লাব ফুটবলের যাত্রা।
২০১৪ সালে ইংলিশ ক্লাব চেলসি ঘোষণা করে সালাহর সাথে তাদের একটি চুক্তি
স্বাক্ষর হতে চলেছে। যদিও লিভারপুল সেসময় তাদের ক্লাবে ভিড়ানোর চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত
চেলসির সাথেই চুক্তিবদ্ধ হন সালাহ।
২০১৪-১৫ মৌসুম চলাকালীন গুংজন শোনা যায় সালাহ হয়তো মিশরে ফিরে যেতে পারেন।
মিশরে যেয়ে মিলিটারিতে নাম লেখাতে পারেন। বিভিন্ন টানাপোড়েনের কারনে ঐ মৌসুমে
সালাহ লিগের বেশি ম্যাচ খেলতে পারেননি।
২০১৫ সালে চেলসি জানায় সালাহ ১৮ মাসের এক চুক্তিতে ইটালিয়ান ক্লাব
ফায়োরেন্টিনায় ধারে খেলতে যাচ্ছেন। তিনি ফায়োরেন্টীনায় ধারে যোগদান করেন। সেখানে
ভালো পারফরমেন্সের কারনে ঐ মোউসুম শেষে ফায়োরেন্টিনা
সালাহকে স্থায়ীভাবে তাদের দলে ভিড়াতে চায় কিন্তু সালাহ রাজি হননি। সালাহ পরবর্তীতে
সিরিএ ক্লাব রোমায় যোগদান করেন। ধারে খেলতে এসে সালাহ ওই মৌসুমে ৪২ ম্যাচে ১৫ গোল
করেন। তার নৈপুন্যে রোমা ৩য় স্থান অধিকার করে পরের বছর চ্যাম্পিয়ন্স লীগ খেলার
যোগ্যতা অর্জন করে। ২০১৫-১৬ মৌসুমে সালাহ প্লেয়ার অফ দ্যা সিজন পুরস্কার লাভ করেন।
২০১৬-১৭ মৌসুমে সালহ স্থায়ীভাবে রোমার হয়ে খেলার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। এই
মৌসুমে তিনি তার ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাট্রিকের দেখা পান। ওই মৌসুমে সালাহ ১৯ টি
গোল করেন। রোমা পয়েন্ট তালিকায় ২ নম্বরে থেকে মৌসুম শেষ করে।
2017-18 মৌসুমে সালাহ
লিভারপুলে দীর্ঘ স্থায়ী এক চুক্তির মাধ্যমে যোগদান করেন। যোগদান
করার পর অভিষেক ম্যাচে গোল করেন ওয়াটফোর্ডের বিপক্ষে। ২০১৮ সালে সালাহ ওই
ওয়াটফোর্ডের বিপক্ষে এক ম্যাচে চার গোল করার কৃতিত্ব অর্জন করেন। এটি ছিল লিভারপুলের
জার্সি গায়ে তার প্রথম হ্যাট্রিক। সে ম্যাচে লিভারপুলের সাথে ৫-০ গোলে জয় পায়
লিভারপুল। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সেমিফাইনালে তার সাবেক ইটালিয়ান ক্লাব রোমার বিপক্ষে
২ গোল ও এসিস্ট করে লিভারপুল্কে ফাইনালে নিয়ে যান। ফাইনালে লিভারপুল মুখোমুখি হয়
রিয়াল মাদ্রিদের। সেখানে সালাহ রিয়াল মাদ্রিদের সার্জিও রামোসের মারাত্মক
ট্যাকেলের স্বীকার হয়ে কাধে ইঞ্জুরি নিয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। সেই ফাইনাল ম্যাচে
লিভারপুল ৩-১ ব্যব্ধানে পরাজিত হয়। মোহাম্মদ সালাহ এই মৌসুমে সব ধরনের প্রতিযোগিতা
মিলিয়ে ৪৩ টি গোল করেন। যদিও পরের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের
ফাইনালে ১ টি গোল করেন এবং টটেনহামের বিপক্ষে ২-০ গোলে জয় লাভ করে চ্যাম্পিয়ন্স
লিগের শিরোপা ঘরে তুলতে সক্ষম হয় লিভারপুল।
২০১৯ সালে লিভারপুল ক্লাব বিশ্বকাপের শীরোপা জয় লাভ করে। ঐ টুর্নামেন্টের
জয় গোল্ডেন বল পুরস্কার পান সালাহ। ২০১৯- ২০ মৌসুমে লিভারপুল প্রিমিয়ার লীগের
শিরোপা জয় লাভ করতে সক্ষম হয়।
২০২০-২১ মৌসুমে এসে সালাহ তার ক্লাব ক্যারিয়য়ারে ১০০তম গোলে দেখা পান। পরের
বছর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাথে ৫-০ গোলের এক জয়ের মাধ্যমে প্রথম আফ্রিকান
প্লেয়ার হিসেবে ১০৪ গোলের রেকর্ড গড়তে সক্ষম হন। ২০২২ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এক
ম্যাচে লিভারপুল মুখোমুখি হয় স্কটল্যান্ডের ফুটবল ক্লাব রেঞ্জার্সের। সেই খেলায়
মাত্র ছয় মিনিটের ব্যাবধানে হ্যাট্রিক পুর্ন করেন সালাহ। যা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের
ইতিহাসে সব চেয়ে দ্রুততম হ্যাট্রিক। 2023 সালের অক্টোবরে সালাহ
২০০ গোলের মাইলফলক অতিক্রম করেন । তার পরের ম্যাচে গোল করে সালাহ প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে
সবচেয়ে বেশি গোল করার গৌরব অর্জন করেন পিছনে ফেলেন ফ্রান্সের তারকা প্লেয়ার থিয়রি হেনরিকে।
২০২৪-২৫ মৌসুমে সালাহ
২৮টি গোলের পাশাপাশি ১৮টি এসিস্ট করেছেন। সালাহর অসাধারন
নৈপুন্যে লিভারপুল এ বছর প্রিমিয়ার লীগের শীরোপা ঘরে তুলতে সক্ষম হলো। ধারণা করা
হচ্ছে ফুটবল রাইটারস এসোসিয়েশন ফুটবলার অফ দ্যা ইয়ার পুরস্কার সালাহই পেতে
যাচ্ছেন।
২০১১ সালে মিশরের
জাতীয় ফুটবল দলে অভিষেক ঘটে সালাহর। তিনি জাতীয় দলের হয়ে প্রথম
গোল করেন নাইজার বিপক্ষে সাথে আফ্রিকা নেশন্স কাপের বাছাই পর্বে। সে ম্যাচে মিশর
৩-০ গোলে জয় লাভ করে। ২০২৩ সালে এসে সালাহ জাতীয় দলের হয়ে ৫০তম গোল করেন। ঐ বছরের
নভেম্বর মাসে বিশ্বকাপ কোয়ালিফাই রাউন্ডে জিবুতির বিপক্ষে সালাহ একাই ৪ গোল করেন।
মিশর সেই ম্যাচে ৬-০ গোলের জয় পায়।
সালাহ ক্লাব ফুটবলে এখন পর্যন্ত মোট ম্যাচ খেলেছেন ২৯৭ । তিনি গোল করেছেন
১৮৫ টি। ইংল্যান্ডে প্রিমিয়ার লীগ খেলতে আসা বিদেশী খেলোয়াড় হিসেবে এখন পর্যন্ত
সবচেয়ে বেশী গোলের মালিক মো সালাহর। তার পিছনে ২য় নম্বরে অবস্থান করছেন
আর্জেন্টাইন তারকা সার্জিও আগুয়েরো তার ২৭৫ ম্যাচে গোল সংখ্যা ১৮৪টি। সালাহ জাতীয়
দলের হয়ে ১০৫ ম্যাচে অংশগ্রহন করে ৬০ গোল করেছেন। সালাহর বর্তমান বয়স বিবেচনায় (৩২
বছর) ক্যারিয়ার লম্বা হওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে তার গোল ও এসিস্টের সংখ্যা
আরো বাড়বে এ বিষয়ে সন্দেহ নেই।
সালাহ ১৯৯২ সালের ১৫ জুন মিশরের বাসইয়ুন শহরে জন্ম গ্রহন করেন। মোহাম্মদ
সালাহ ২০১৩ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তার স্ত্রীর নাম মেজাই। ২০১৪ সালে তাদের
প্রথম সন্তান কন্যা মক্কা পৃথিবীতে আসেন। ইসলামের পবিত্র নগরী মক্কার নাম অনুসারে
তার কন্যার নাম মক্কা রাখা হয় বলে জানা যায়। ২০২০ সালে তাদের ঘর আলো করে আসে
দ্বিতীয় কন্যা সন্তান কায়ান।
তথ্যসুত্রঃ উইকিপিডিয়া
0 মন্তব্যসমূহ