বউচি এবং কানামাছি খেলা দুটি গ্রাম অঞ্চলের মানুষের কাছে জনপ্রিয় খেলা।
কালের আবহে কমতে বসেছে এই খেলা দুটির আবেদন। তবে এখনো বিলুপ্তি হয়ে যায়নি গ্রাম বাংলার
মানুষের কাছ থেকে। মাঝে মঝে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের কোথাও কোথাও চোখে পড়ে। তবে আধুনিক
সংস্কৃতির ক্রম বিকাশ যে দ্রুত গতিতে ঘটছে তাতে করে খুব বেশি দিন আর এই গ্রামীন ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা টিকে থাকবে কিনা
সন্দেহ আছে। আজ বউচি আর কানামাছি নামক দুটি খেলা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব।
বউচি
গ্রামের খেলার মাঠে ছেলেমেয়েদের বউচি খেলার দৃশ্য ছবি- সংগৃহিত
বউচি বাংলাদেশেরে
একটি জনপ্রিয় খেলা বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলে এই খেলার জনপ্রিয়তা আকাশ চুম্বি। গ্রামের
ছেলে মেয়েরা বিকালে দল বেঁধে বউচি খেলায় মেতে ওঠে। এক সাথে অনেক খেলোয়াড় মিলে এই খেলা
করা যায় বলে এই খেলার মজাও অনেক। স্থান ভেদে বা গ্রাম ভেদে এই খেলা চি বুড়ি, বুড়িকপাটি,
বৌ-বসান্তি নামে পরিচিত।
বউচি খেলার নিয়মের
কথায় যদি আসি তাহলে প্রথমে এই খেলায় দুটি পক্ষ থাকবে। অর্থাৎ প্রতিদ্বন্দী দুটি দল
থাকবে। প্রতি দলে সাধারনত ৭ থেকে ১০ জন বা কম বেশী খেলোয়াড় থাকতে পারবে। প্রত্যেক দলে
একজন করে অধিনায়ক থাকবে। বড় একটি বৃত্তাকার ঘর আকতে হবে। ঘরটি অনেক সময় আয়তাকারও আঁকা
হয়। বড় বৃত্তের বেশ কিছুটা দূরে একটি ছোট বৃত্ত আঁকতে হবে। একটি দল বড় বৃত্ত বা ঘরের মধ্যে অবস্থান করবে এবং তাদের একজন ছোট ঘরের
মাঝে অবস্থান করবে। যাকে বুড়ি বা বউ বলা হবে। টসের মাধ্যমে নির্ধারণ হবে কোন দল ঘরের
ভিতরে অবস্থান করবে আর কোন দল বাইরে অবস্থান করবে। প্রথমে বড় ঘরের মাঝে অবস্থানকারী দলের একজনকে রেখে আসা
হবে ছোট ঘরে। বিপক্ষ দলের কাজ হবে এই বঊ বা বুড়িকে পাহারা দেওয়া যাতে বুড়ি কোনভাবেই
পালিয়ে বড় ঘরে ফেরত না যেতে পারে।
বুড়ির দলের একজন
করে দম নিয়ে চি বলে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের তাড়া করবে। তার লক্ষ্য হলো বিপক্ষ দলকে
তাড়া করে সেই সুযোগে বুড়ি যেন নিজের বড় ঘরে ফিরে আসতে পারে। দম নিয়ে চি বলে তাড়া করার
সময় বিপক্ষ পাহারা দেওয়া দলের কাউকে ছুয়ে দিতে পারলে সেই খেলোয়াড় সাময়িকভাবে খেলা থেকে
আউট হয়ে যাবে। তবে দম নিয়ে আসা খেলোয়াড়কে অবশ্যই দম থকাতে নিজের বড় ঘরে ফিরে যেতে হবে।
দম শেষ হয়ে গেলে তিনি যদি নিজের ঘরে ফিরতে না পারেন সেই সময় যদি পাহারা দেওয়া দলের
কেই তাকে ছুঁয়ে দেয় তবে চি দেওয়া খেলোয়াড় নিজেই আউট হয়ে যাবে।
বউ বা বুড়ি যদি তার
বৃত্তের বাইরে চলে যায় বা নিজের দলের বড় ঘরে
যাওয়ার চেষ্টা করে এ সময় যদি পাহারা দেওয়া খেলোয়াড় তাকে ছুঁইয়ে ফেলে তবে চি দেওয়া দল
সকলে আউট হবে তথা বিপক্ষ দল চি দিয়ে বউ চুরি করা বা বুড়ি নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে। আর
বউ বা বুড়ি যদি পাহারা দেওয়া দলের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিজেদের ঘরে পৌছাতে পারে তবে তার
এক গেমে এগিয়ে যাবে। এভাবে পালাবদল ঘটতে থাকবে আর খেলা এগিয়ে যাবে।
বউচি খেলার কয়েকটি
বোলঃ
১.ছি গো হরি
অংক করি
অংকের বদল
খেলনা করি
মোর বাড়ি
ঢাকা
ঘরখানা পাকা
ঘরে থাকে
আলমারি
সকাল বিকাল
কিল মারি।
২. ছি কুতকুত তানিয়া
নৌকা দিমু বানাইয়া
নোকা যদি ডুবে
বিয়া দিমু তোরে পুবে।
৩. ওপার গেছিলাম খেলাইতে
পথে পাইছে ডাকাইতে
ডাকাইতের নাম কালাচান
গরু আইনা ঘরে বান।
কানামাছি খেলাঃ
ছোট বাচ্চাদের কানামাছি খেলার একটি মুহূর্ত ছবি-সংগৃহিত
কানামাছি গ্রাম বাংলার
ছেলেমেয়েদের কাছে খুব প্রিয় একটি খেলা। এটি একটি পুরনো খেলা। ছেলে ও মেয়ে উভয়ই এই খেলায়
অংশ নিতে পারে। এ খেলার প্রচলন গ্রাম বাংলায় বেশি দেখা যায়। এই খেলার জন্যে খুব বেশি
জায়গার প্রয়োজন হয় না। ফলে শহরের ছেলেমেয়েরাও এ খেলা খেলে চরম আনন্দ উপভোগ করতে পারে।
বাসার সামনে খোলা জায়গায় অথবা ছাদের উপরে কানামাছি খেলার আয়োজন করা সম্ভব।
এই খেলার নির্দিষ্ট
নিয়ম-কানুন নেই। খেলা পরিচালনার জন্যে কোন রেফারি, আম্পায়ার জাজের প্রয়োজন হয় না। তবে
এই খেলার কিছু সাধারণ নিয়ম আছে যা নিচে তুলে ধরা হলো;
কানামাছি খেলায় খেলোয়াড়ের
কোন নির্দিষ্ট সঙ্খ্যা নেই। সাধারণত ৫-১০ জন খেলোয়াড় এই খেলায় অংশগ্রহন করে থাকে। তবে
বেশি খোলোয়াড় হলে খেলায় হট্টগোল বেশি হয়। ফলে প্রয়োজন অনুসারে সংখ্যা কম্ বেশি করা
যেতে পারে। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই খেলায় কোন প্রতিপক্ষ থাকে না। এই খেলার উপকরন বলতে
একটি গামছা বা গামছা জাতীয় তোয়ালে বা এক খন্ড কাপড়। এই কাপড় দিয়ে একজনের চোখ বেঁধে
দিতে হবে। কার চোখ বাধা হবে তা লটারীর মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে। যার চোখ বাধা হয় তাকে
বলা হয় কানা। চোখ বাঁধার পর পরই সবাই কানার চার পাশে মাছির মত ঘুরতে থাকে। আর চোখ বাঁধা
কানার গায়ে চিমটি কাটতে থাকে আর বলতে থাকে -
কানা মাছি ভোঁ ভোঁ
যারে পাবি তারে ছোঁ
চোখ বাধাঁ কানা তার চারপাশে ঘুরতে
থাকা যে কাউকে ধরার চেষ্টা করবে। তারপর যখনই সে চিমটিকাটা
ছেলেমেয়েদের কাউকে ধরবে চোখ বাধাঁ অবস্থায় তার নাম বলতে হবে। যদি তার নাম সঠিকভাবে
বলতে পারে তাহলে যে ধরা পড়েছিলো তাকে কানা হতে হবে। তাকে ঘিরে আবার খেলা শুরু হবে
আর যদি সঠিক নাম বলতে না পারে তাহলে যার চোখ বাধাঁ ছিলো তাকেই ঘিরে আবার খেলা শুরু
হবে। যদিও বর্তমানে ছেলেমেয়েদের এই খেলা খুব কম করতে দেখা যায়। এই খেলায় ছেলেমেয়েরা প্রচুর আনন্দ পেয়ে থাকে।
0 মন্তব্যসমূহ