![]() |
লিওনেল মেসির ছোটবেলার ছবি ছবি-সংগৃহিত |
লিওনেল মেসি যাকে
সারা বিশ্ব এক নামে চিনে। এই সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলারের শিশুকাল বা শৈশব মোটেই সুখকর ছিলো
না। নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে সেই ছোট শিশু আজকের মেসি হয়ে উঠেছেন সবার চোখে।তার
শৈশবকালে ঘটে গেছে বিশেষ দুর্ঘটনা যা জয় করে মেসি বড় হয়ে উঠেছেন। সে সম্পর্কে
জানার আগ্রহ মেসি ভক্তদের কখনই কম হওয়ার কথা নয়। তেমনি দুটি ঘটনা নিয়ে নিম্নে
তুলে ধরা হলো-
মেসির খুব অল্প বয়স যখন তখনি ঘটে গিয়েছিলো একটি দুর্ঘটনা। মেসির বয়স তখন
দেড় কি দুই বছর। মেসি কেবল হাঁটা শিখেছেন । দৌড়াতেও পারেন। এই সময়টা শিশুর পিতা
মাতার জন্য একটু বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কোন জিনিস মুখে দেওয়া যাবে
কোনটি দেওয়া যাবে না তা শিশুরা বুঝতে পারে না। দৌড়াতে যেয়ে কিসের উপর গিয়ে পড়ে তা
শিশুরা বুঝতে পারে না। মেসিও বুঝতে পারেনি। মেসির মা সিলিয়া ঘরের কাজে ব্যস্ত
ছিলেন। অন্য কেউ খেয়াল করেনি মেসি খেলতে খেলতে বাড়ির সামনে রাস্তায় নেমে পড়েছেন।
ঠিক সেই সময় দ্রুত গতির একটি সাইকেল তার দিকে ছুটে আসছিলো। সাইকেল চালকও খেয়াল
করেনি। চালকের মনোযোগ হয়তো অন্যদিকে ছিলো। ফলে যা হবার তাই হলো। সাইকেলের নিচে
চাপা পড়লেন ছোট্ট বালক মেসি। সাইকেলের চাকার আঘাতে রাস্তার এক পাশে ছিটকে পড়ে
গেলেন মেসি। মেসির আর্তনাত শুনে সাইকেল থামালো চালক। সাইকেল চালক ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছেন কি
করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। বালকটিকে রাস্তা থেকে তুলবেন নাকি ঝামেলা এড়ানোর জন্য
পালিয়ে যাবেন। কারন পুলিশ কেস হয়ার সম্ভাবনা আছে। বা সবাই জানতে পারলে তাকে মারধরও
করতে পারে। সাইকেল চালক দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে গেলো।
মেসির কান্না শুনে তার মা সিলিয়া ছুটে আসলেন। মেসিকে ঘরে নিয়ে এসে প্রাথমিক
চিকিতসা দেওয়া হলো। মেসির পা ফুলে গেছে। মেসির বাবা জর্জকে খবর দেওয়া হলো। সেই
রাতে মেসি ঘুমাতে পারছেন না ব্যাথায় কান্নাকাটি করছেন। মেসির বাবা-মা চিন্তায় পড়ে
গেলেন। মেসির বাবা হাসপাতালে খোজ নিলেন। হাসপাতাল থেকে জানালো হলো সকালে হাসপাতালে নিয়ে আসতে। রাত কোন রকমে পার করে সকালে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্তারের
পরামর্শ অনুযায়ী এক্স রে করানো হলো। মেসির বাবা যে আশঙ্কা করছিলেন তাই সত্য হলো। বালক
মেসির বাম পা মচকে গেছে। বাম পায়ে প্লাস্টার করানো লাগবে। কেউ তখন কল্পনাও করেনি সেই
বাম পা যা দিয়ে ফুটবল বিশ্ব মাতিয়ে রাখবেন। কয়েক সপ্তাহ পরে হাসপাতাল থেকে মেসিকে ছেড়ে
দেওয়া হলো।
মেসির প্রথম জন্মদিনে
তার খালাখালু মেসিকে একটি জার্সি উপহার দেন। সেটি ছিলো নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজ টিমের জার্সি।
মেসির চতুর্থ জন্মদিনে তার বাবা-মা তাকে একটি ফুটবল কিনে দেন। সেই ফুটবল নিয়ে মেসি
বাড়ির আশেপাশে ফুটবল খেলতে শুরু করল। আর্জেন্টিনায় ফুটবল সংস্কৃতিটাই এমন যে সেখানে অভিবাবকরা জন্মদিনে তাদের সন্তানদের
বিভিন্ন রকম ফুটবল উপকরণ কিনে দেন।
মেসির জীবনে আরো
একবার বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুকির তথা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। মেসির শৈশবকালে যখন তিনি
নিউওয়েলস ক্লাবের হয়ে খেলা শুরু করেছেন। ঠিক তখনই মেসির রোগ ধরা পড়লো। ডাক্তার জানালেন
মেসির হরমোনাল গ্রোথের সমস্যা রয়েছে। যে কারণে মেসির উচ্চতা বাড়ছে না। এটি একটি বিরল
রোগ। এমন বিরল রোগ এটি গবেষকরা বলেন প্রতি বিশ কোটিতে একজন এই রোগী আক্রান্ত হয়ে থাকে।
মেসির চিকিতসকের নাম দিয়াগো সেকওয়ারসজেটিন। তিনি মেসির চিকিতসার ব্যাপারে বিভিন্ন রকম
পরামর্শ দিলেন। এইরোগের চিকিতসার ব্যয় অনেক। হরমোন গ্রোথ বাড়ানোর জন্য বিশেশ একটি প্রোগ্রিয়াম
বানালেন ইন্ডোক্রিনোলজিস্ট। বলা হলো প্রতিদিন একটি করে ইঞ্জেকশন দেওয়া হবে মেসিকে।
এইভাবে টানা ৩-৬ বছর চিকিতসা নিতে হবে মেসিকে। এই চিকিতসায় মোট ব্যয় হবে প্রায় ১ লাখ
পাইন্ড যা বাংলাদশি টাকায় প্রায় ১ কোটি টাকা।
মেসির পরিবারের পক্ষে
এই ব্যয় বহন করার মত সক্ষমতা ছিলো না। ১২ বছর বয়সী মেসির জন্য তার ক্লাব নিউ ওয়েলস
এই ব্যয় বহন করতে রাজি ছিলো না। যদিও মেসি তখনো দারুন নৈপুন্য দেখিয়ে গোলের পর গোল
করে চলেছেন।
এমন সময় মেসির বাবা
মেসিকে রিভার প্লেটে খেলানোর কথা ভাবলেন। তারা মেসিকে নিতে রাজি হলো। কিন্তু নিউওয়েলস
মেসিকে ছাড়তে রাজি হলো না। তারা কালক্ষেপন করতে লাগলো। ঠিক তখনি ত্রানকর্তা হিসেবে
আবির্ভূত হলো স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা। তারপর বলা যায় মেসির ও তার পরিবারের ভাগ্যই
পরিবর্তন হয়ে গেলো।
0 মন্তব্যসমূহ