![]() |
লাসিথ মালিঙ্গা ছবি- সংগৃহিত |
লাসিথ মালিঙ্গা একজন
শ্রীলঙ্কান সাবেক ক্রিকেটার। মালিঙ্গাকে
বিবেচনা করা হয় বিশ্বের অন্যতম সেরা পেস বোলার হিসেবে। বিশেষ করে ইনিংসের শেষ দিকে
ডেথ বোলিংযের জন্য বিশ্ব জুড়ে নাম করা। একের পর এক ইয়র্কার বল করার ক্ষেত্রে
সিদ্ধহস্ত ছিলেন মালিঙ্গা। ঝাকড়া চুলের বাবরি দুলানো মালিঙ্গা তার ব্যাতিক্রমী
বোলিং এ্যাকশনের জন্য ক্রিকেট ভক্তদের কাছে আলাদাভাবে পরিচিত। তার সফলতার অন্যতম
অস্ত্র ছিলো স্লোয়ার ইয়র্কার। মালিঙ্গা জন্মগ্রহন করেন ১৯৮৩ সালে শ্রীলঙ্কার গলে
শহর থেকে ১২ কিমি দূরে অবস্থিত এক গ্রামে। তার পিতা ছিলেন একজন বাস ম্যাকানিক।
মালিঙ্গার টেস্ট অভিষেক ঘটে ২০০৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। তিনি ঐ খেলায়
৬ উইকেট লাভ করেন। তিনি আউট করেন এড্যাম গিলক্রিস্ট,ড্যারেন লেহম্যান (দুইবার),
ড্যামিয়েন মার্টিন, শেন ওয়ার্ন, মাইকেল ক্যাজপেরইজকে। তিনি ওডিয়াই ক্রিকেটে বা প্রথম একদিনের আনর্জাতিক ম্যাচ খেলেন ২০০৪
সালের এশিয়া কাপে প্রতিপক্ষ ছিলো সংযুক্ত আরব আমিরাত।
২০০৭ সালের ওডিআই বিশ্বকাপে
সুপার এইটের এক ম্যাচে মখোমুখি হয় শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ঐ ম্যাচে মালিঙ্গা
বিশ্বের প্রথম বোলার হিসেবে পরপর চার বলে চার উইকেট নিয়ে
বিশ্ব রেকর্ড করেন। তিনি একে একে আউট করেন শন পোলক, এন্ড্রু হল, জ্যাক ক্যালিস এবং
মাখায়া এন্টিনিকে। এটি ছিলো ৪৫তম অভারের শেষ দুই বল এবং
তার পরের অভারের প্রথম দুই বল। তবে সেই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ১ উইকেটে পরাজিত হয়।
২০১১ সালের বিশ্বকাপে কেনিয়ার বিপক্ষে আবারো হ্যাট্রিক করেন। যেটির
ম্যাধ্যমে বিশ্বকাপের ইতিহাসে একমাত্র বোলার হিসেবে দুটি হ্যাট্রিক করার গৌরব
অর্জন করেন। একই বছরে মালিঙ্গা তার তৃতীয় হ্যাট্রিক করেন কলোম্বতে অনুষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। এর মাধ্যমে
মালিঙ্গাই একমাত্র বোলার যার ঝুলিতে আছে ওয়ানডে ক্রিকেট
ম্যাচে তিন তিনটি হ্যাট্রিক।
টিটুয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে তিনি প্রথম হ্যাট্রিক করেন ২০১৭ সালে
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। মালিঙ্গা পরপর সাক ঘরে ফেরান মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিকুর রহিম এবং মেহেদি হাসান মিরাজকে।
২০১৯ সালে ক্যারিয়ারের ৫ম হ্যাট্রিক এবং টিটুয়েন্টির ২য় হ্যাট্রিক করেন
মালিঙ্গা। শুধু হ্যাট্রিক নয় এটি ছিলো পর পর ৪ বলে ৪ উইকেট। প্রতিপক্ষ এবার নিউজিল্যান্ড। একে একে সাজঘরে পাঠান কলিন মুনরো, হামিশ
রাদারফোর্ড,কলিন ডি গ্রান্ডহোম এবং রস টেলরকে।
নিউজিল্যান্ডের সাথে শ্রীলঙ্কার এই সিরিজ চলাকালে মালিঙ্গা বিশ্বের প্রথম বোলার
হিসেবে টিটুয়েন্টি ক্রিকেটে ১০০ উইকেট লাভ করেন।
একই সাথে মালিঙ্গা বিশ্বের মধ্যে একমাত্র বোলার যিনি পর পর চার বলে ৪ উইকেট
নিয়েছেন দুই বার। প্রথবার ওডিয়াইতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। আরেকবার টিটুয়েন্টিতে
নিউজিল্যান্ডের সাথে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সকল ফরমেট
মিলিয়ে ৫ বার হ্যাট্রিক করেছেন লাসিথ মালিঙ্গা যেটি এখন পর্যন্ত বিশ্ব রেকর্ড। তার
কাছাকাছি আছেন পাকিস্থানের কিংবদন্তী বামহাতি পেস বোলার ওয়াসিম আকরাম যার
হ্যাট্রিকের সংখ্যা ওডিআইতে ২টি টেস্টে ২ টি সব মিলিয়ে ৪ টি।
মালিঙ্গা টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন মোট ৩০ টি। টেস্ট ক্রিকেটে ক্যারিয়ার শুরুর
গোড়ার দিকে তার বলের গতি আর বাউন্সার ব্যাটারদের অনেক ভুগিয়েছিলো। তিনি ১৪০ -১৫০
কিমি গতিতে বল করেতেন। পরবর্তীতে ওডিআই এবং টিটুয়েন্টি ক্যারিয়ার লম্বা করার উদ্দেশ্যে ২০১১ সালে টেস্ট
ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। তিনি টেস্ট ক্রিকেটে মোট উইকেট লাভ করেছেন ১০১ টি। ৫ উইকেট
লাভ করেছেন ৩ বার। টেস্টে সেরা বোলিং ফিগার ৫০ রানে ৫ উইকেট।
মালিঙ্গা সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তুলনামুলক বেশি উজ্জ্বল ছিলেন। তিনি মোট ওডিয়াই
ম্যাচ খেলছেন ২২৬ টি উইকেট লাভ করেছেন ৩৩৮টি। তার ওডিয়াই ক্যারিয়ারে ৫ উইকেট পেয়েছেন
৮ বার। তার সেরা বোলিং ফিগার ৩৮ রানের বিনিময়ে 6 উইকেট।
তিনি টিটুয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ৮৪
টি। উইকেট লাভ করেছেন ১০৭ টি। মালিঙ্গার সেরা টিটুয়েন্টি বোলিং ফিগার ৬ রানের বিনিময়ে
৫ উইকেট।
লাসিথ মালিঙ্গা ২০১৪ সালে টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপে অধিনাকত্ব করার সুযোগ পান।
কারন নিয়মিত অধিনায়ক দীনেশ চান্ডিমাল নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়লে মালিঙ্গা শ্রীলঙ্কাকে
নেতৃত্ব দেন। তার নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কা ২০১৪ সালে টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় করে।
একজন পেস বোলাররে ক্যারিয়ারে সবচেয়ে যে বিষয়টি চ্যালেঞ্জের হিসেবে ধরা হয়
তা হলো ইঞ্জুরি। মালিঙ্গা তার ক্যারিয়ারে অনেক বার ইঞ্জুরিতে পড়েছেন। বাদ পড়েছেন
অনেক গুরুত্বপুর্ন খেলা থেকে। ইঞ্জুরির কারনে ২০১৫ সালে অধিনায়কত্ব থেকে সরে
দাড়ান। ২০১৬ সালে তাকে অধিনায়ক করে এশিয়া কাপের দল সাজাই শ্রীলঙ্কা। কিন্তু আরব
আমিরাতের সাথে এক ম্যাচ খেলার পর মালিঙ্গা হাঁটুর ইঞ্জুরিতে পড়েন। তার ফলশ্রুতিতে
টুর্নামেন্টের বাকি ম্যাচ আর খেলতে পারেননি। শ্রীলঙ্কা বাকি ম্যাচ গুলো হেরে এশিয়া
কাপ থেকে বিদায় নেয়।
২০১৯ সালে লাসিথ মালিঙ্গা তার ক্যারিয়ারের শেষ একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন
বাংলাদেশের বিপক্ষে। শেষ ম্যাচেও মালিঙ্গা দারুন ইয়র্কার বলে আউট করেন তামিম ইকবাল
এবং সৌম্য সরকারকে। ইনিংসের শেষদিকে তুলে নে মুস্তাফিজুরের উইকেট।
২০২১ সালে লাসিথ মালিঙ্গা ক্রিকেটের
সকল ফরমেট বা সংস্করন থেকে অবসর ঘোষণা করেন।
0 মন্তব্যসমূহ